সৃষ্টিকর্তা মানুষকে ভালো-মন্দ, উচিত-অনুচিতের জ্ঞান দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। সেজন্য মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব । প্রত্যেক মানুষ নিজের জন্য নিজের সন্তান-সন্ততির জন্য ভালো কিছু প্রত্যাশা করে । যা তার অন্যের জন্যও করা বা চাওয়া উচিত । এখানেই সামাজিক দায়িত্ববোধ, মূল্যবোধ ও নৈতিকতার প্রশ্ন । কোনো ব্যবসায়ী যখন জেনে-বুঝে পরিবেশ দূষণ করে, ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় তখন সে কতটা অনৈতিক ও অবিবেচকের মত কাজ করছে তা সম্পূর্ণ বুঝে উঠতে পারে না; মুনাফা অর্জনই তার কাছে হয়ে ওঠে মুখ্য । ক'দিন আগে টেলিভিশনে ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের এক অসুস্থ বৃদ্ধা মাকে দেখলাম । যিনি তার তিন যুবক সন্তান হারিয়েছেন একে একে । পরে মৃত্যুর কারণ জানা গেল । তারা ক্ষেতে কীটনাশক বিষ স্প্রের কাজ করতো । কিন্তু নাকে-মুখে কাপড় দিত না । এই বিষ শরীরে ঢুকে প্রত্যেকেরই ক্যান্সারে মৃত্যু ঘটেছে । তাই ঝুঁকিমুক্ত ভাবে নিজে বাঁচতে ও অন্যকে বাঁচাতে সবাইকে আরো সচেতন ও সতর্ক হতে হবে ।সৃষ্টিকর্তা মানুষকে ভালো-মন্দ, উচিত-অনুচিতের জ্ঞান দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। সেজন্য মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব । প্রত্যেক মানুষ নিজের জন্য নিজের সন্তান-সন্ততির জন্য ভালো কিছু প্রত্যাশা করে । যা তার অন্যের জন্যও করা বা চাওয়া উচিত । এখানেই সামাজিক দায়িত্ববোধ, মূল্যবোধ ও নৈতিকতার প্রশ্ন । কোনো ব্যবসায়ী যখন জেনে-বুঝে পরিবেশ দূষণ করে, ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় তখন সে কতটা অনৈতিক ও অবিবেচকের মত কাজ করছে তা সম্পূর্ণ বুঝে উঠতে পারে না; মুনাফা অর্জনই তার কাছে হয়ে ওঠে মুখ্য । ক'দিন আগে টেলিভিশনে ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের এক অসুস্থ বৃদ্ধা মাকে দেখলাম । যিনি তার তিন যুবক সন্তান হারিয়েছেন একে একে । পরে মৃত্যুর কারণ জানা গেল । তারা ক্ষেতে কীটনাশক বিষ স্প্রের কাজ করতো । কিন্তু নাকে-মুখে কাপড় দিত না । এই বিষ শরীরে ঢুকে প্রত্যেকেরই ক্যান্সারে মৃত্যু ঘটেছে । তাই ঝুঁকিমুক্ত ভাবে নিজে বাঁচতে ও অন্যকে বাঁচাতে সবাইকে আরো সচেতন ও সতর্ক হতে হবে ।
১. ব্যবসায়িক মূল্যবোধ ও নৈতিকতার ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারবে
২. ব্যবসায়িক মূল্যবোধ ও নৈতিকতার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে পারবে
৩. ব্যবসায়ের সামাজিক দায়বদ্ধতার ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারবে
৪. ব্যবসায়ের সামাজিক দায়বদ্ধতার গুরুত্ব বিশ্লেষণ করতে পারবে
৫. সামাজিক দায়বদ্ধতার ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করতে পারবে
৬. ব্যবসায়িক কারণে পরিবেশ দূষণের প্রভাব বিশ্লেষণ করতে পারবে
৭. পরিবেশ সংরক্ষণে বণিক সমিতি/ব্যবসায় সংগঠনসমূহের দায়িত্ব বিশ্লেষণ করতে পারবে
৮. সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের গৃহিত কার্যক্রম বিশ্লেষণ করতে পারবে
৯. খাদ্য সংরক্ষণে যে সকল রাসায়নিক ব্যবহার হয় সেগুলোর ক্ষতিকর দিক শনাক্ত করতে পারবে
১০. রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদিত খাদ্যের ক্ষতিকর দিকগুলো বিশ্লেষণ করতে পারবে
১১. ক্ষতিকারক পলিথিন উৎপাদন ও ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো শনাক্ত করতে পারবে
১২. খাদ্য উৎপাদন ও সংরক্ষণে রাসায়নিক ব্যবহারে সতর্কতা ও করণীয়দিকগুলো চিহ্নিত করতে পারবে
১৯৯৫
১৯৯৭
১৯৯৯
২০০০
গুদামজাতকরণ
মুনাফা অর্জন
নৈতিকতা
চাহিদা পূরণ
ক. i
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii
মি. বিল্লাহ একজন সমাজ গবেষক সাদা মনের মানুষ। তিনি সমাজে নানান অশান্তি, মানুষের মাঝে নানান জটিলতা, নির্দ্বিধায় মিথা বলা ও অন্যকে ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা দেখে ব্যথিত হন। মেয়ের সাথে মার্কেটে গেছেন । বিক্রয়কর্মী দাম চাইলো। বললো, এটা তার ৫০০ টাকায় কেনা। ৪৫০ টাকায় বিক্রয় করলো । তিনি দোকানিকে বললেন, বাবা মিথ্যা কথা কেন বলো? ছেলেটা বললো, স্যার এটা না বললে ব্যবসায় করা যায় না । আম পাকাতে নিষিদ্ধ ক্যামিক্যাল কেনো ব্যবহার করো এটা জিজ্ঞাসা করলেন একদিন এক ব্যবসায়ীকে । ব্যবসায়ীর জওয়াব, স্যার আপনারাতো আমের রং ভালো না হলে কেনেন না, তাই আমাদের করার কী? বাড়ির পাশে রাস্তায় কাজ করছে কন্ট্রাক্টর । কোনোভাবে ফাঁকিঝুঁকি দিয়ে কাজ হচ্ছে দেখলেই বোঝা যায় । তিনি কন্ট্রাক্টরকে জিজ্ঞাসা করলেন, বাবা কেনো এভাবে কাজ করো? তার সাফ জওয়াব, কাজ পেতেই ২৫% বিভিন্ন পক্ষকে দিতে হয়েছে । কাজ শেষ করে বিল আনতে নানানভাবে ২৫% যাবে। আমার লাভ ২৫% বাদ দিলে কাজ যা হওয়ার তাই হচ্ছে । মি. বিল্লাহ ভাবেন, মানুষের উচিত-অনুচিতের বোধ মরে গেছে সর্বত্রই । যা একদিনে মরেনি একদিনে ভালোও হবে না ঠিক, কিন্তু চেষ্টাটাই বা শুরু হবে কবে?
কোনটা ভালো কোনটা মন্দ, কোনটা উচিত কোনটা অনুচিত এ সংক্রান্ত মানুষের বোধ বা উপলব্ধিকেই মূল্যবোধ বলে । দীর্ঘদিনের ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-ভাবনা ইত্যাদির আলোকে ব্যক্তি, দল ও সমাজের মধ্যে এরূপ বোধের সৃষ্টি হয় এবং তা সমাজের মানুষদের আচরণকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে । এরূপ বোধ বা আচরণকে সমাজে মূল্যবান ও অনুকরণীয় বলে মনে করা হয়ে থাকে । মূল্যবোধের ওপর মানুষের বিবেকবোধের একটা সাধারণ প্রভাব থাকায় সকল সমাজেই এরূপ বোধ ও আচরণের একটা সাধারণ ভাবধারা গড়ে উঠতে দেখা যায় । নৈতিকতার সাথে মূল্যবোধের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান । কারণ নৈতিকতা ভালমন্দের সাথে সম্পর্কযুক্ত । যেটি করা উচিত সেটি করা এবং যা করা উচিত নয় তা থেকে বিরত থাকা- নৈতিকতার বিষয় । এই করণীয় ও বর্জনীয়র বিষয়টি মূল্যবোধ বা দীর্ঘদিনে গড়ে উঠা ধ্যান-ধারণা ও বিশ্বাস দ্বারা নিঃসন্দেহে প্রভাবিত হয়ে থাকে । শিক্ষকের কাজ হলো শিক্ষার্থীদের জ্ঞানদান ও মানুষ হিসেবে গড়তে সহায়তা করা। একজন সরকারি কর্মকর্তার কর্তব্য হলো রাষ্ট্রের স্বার্থে জনগণের কল্যাণে অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা । একজন ব্যবসায়ীর কর্তব্য হলো সততা ও ন্যায়-নিষ্ঠার সাথে পণ্য ও সেবা সরবরাহের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করা । এর সবই মূল্যবোধ থেকে উৎসারিত না হলে সেখানে বিপত্তি দেখা দেয়াই স্বাভাবিক। আইন ও আইনের যথার্থ প্রয়োগ নৈতিকতার পথে চলতে মানুষকে বাধ্য বা উৎসাহিত করে ঠিকই তবে মূল্যবোধকে সুরক্ষার জন্য সমাজে সুশিক্ষার বিস্তার, সামাজিক সাম্য ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা, দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি, কল্যাণধর্মী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতি রাজনীতিকদের দৃঢ় অঙ্গীকার এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগে যত্নবান হওয়া প্রয়োজন ।
ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে উচিত-অনুচিত মেনে চলা বা ভালোকে গ্রহণ ও মন্দকে বর্জন করে চলাই হলো ব্যবসায়ের নৈতিকতা। ব্যবসায় সমাজ বিজ্ঞানের একটা গুরুত্বপূর্ণ শাখা হওয়ায় এক্ষেত্রে নৈতিকতার বিষয়টি অধিক তাৎপর্যপূর্ণ । ব্যবসায় সমাজের মানুষের একটা গুরুত্বপূর্ণ উপজীবিকা । মানুষ তার প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবার জন্য ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভরশীল । তাই ব্যবসায়ী যদি উচিত-অনুচিত না মানে, সত্য-মিথ্যার পার্থক্য ভুলে যায়, অস্বাস্থ্যকর পণ্য উৎপাদন ও বিক্রয় করে, পরিবেশ দূষণ করে মূল্যবোধ হারায় তখন ঐ সমাজে ব্যবসায় নামক পেশার সম্মান ও মর্যাদা যেমনি থাকে না তেমনি সাধারণ মানুষও প্রতারিত হতে হতে ভালো-মন্দ জ্ঞান হারাতে থাকে । যা ঐ সমাজে অনৈতিক সংস্কৃতির জন্ম দেয় । তাই ব্যবসায় পরিচালনায় কথা-বার্তা, আচার-আচরণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কার্যক্রম পরিচালনার সকল পর্যায়ে নৈতিক মানদণ্ড মেনে চলাকেই ব্যবসায়ে নৈতিকতা নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে । নিম্নে ব্যবসায়ে নৈতিকতার কিছু বিষয় উল্লেখ করা হলো:
পালনীয় বিষয় | বর্জনীয় বিষয় |
১. বৈধ উপায়ে ব্যবসায় চালানো; ২. সকল ক্ষেত্রে সততা বজায় রাখা ও নির্ভরতার গুণ অর্জন করা; ৩. শ্রমিক-কর্মীদের সাথে উত্তম ব্যবহার করা; ৪. সকলের পাওনা যথাসময়ে পরিশোধ করা; ৫. প্রতিষ্ঠানের বাইরে বিভিন্ন পক্ষের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করা; ৬. স্বগোত্রীয় ব্যবসায়ীদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা; ৭. পরিবেশ রক্ষায় সাধ্যমতো ভূমিকা রাখা; ৮. সরকারি নিয়ম-রীতি মেনে চলা; ৯. আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা; ইত্যাদি | ১. প্রতারণা, শঠতা ও ধোকাবাজির আশ্রয় গ্রহণ না করা; ২. ক্ষতিকর ও বেআইনি পণ্য উৎপাদন বা বিক্রয় না করা; ৩. বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি না করা; ৪. একচেটিয়া প্রবণতা পরিহার করা; ৫. মাপে কম না দেয়া; ৬. ক্ষতিকর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত না হওয়া; ৭. কর ও রাজস্ব ফাঁকি না দেয়া; ৮. আইন মেনে চলা; ইত্যাদি |
শহরের মধ্যবিত্ত একটা পরিবারের কথা যদি ধরা যায় তবে দেখা যাবে চাল-ডাল, তরি-তরকারি, মাছ- গোশতসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সকল জিনিসের জন্য পরিবারটি ব্যবসায়ীদের ওপর সম্পূর্ণভাবেই নির্ভরশীল । তৈজসপত্র, আসবাবপত্র থেকে শুরু করে জামা-কাপড়, বাচ্চাদের বই-খাতা, কলম, ব্যাগ, নাস্তা, যাতায়াত ইত্যাদি সবকিছুতেই ব্যবসায়ের সংশ্লিষ্টতা । তাই বর্তমানকালে ব্যবসায় মানব জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। মানুষের আয় রোজগার ও সরকারের রাজস্ব আয়ের প্রধান অবলম্বন । ব্যবসায় শুধুমাত্র একটা দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় সারা বিশ্বেই তার এখন অবাধ বিচরণ । তাই দেশের ভাবমূর্তি এবং সামর্থ্যও এই ব্যবসায়ের দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাই ব্যবসায় কতটা নীতি-নৈতিকতা মেনে পরিচালিত হচ্ছে তার ওপর সমাজের মানুষগুলোর নৈতিকতার মান, জনগণের মন-মানসিকতা, সামাজিক সুস্থতা, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ইত্যাদি নানান বিষয় নির্ভর করে । যে কারণে ব্যবসায়িক মূল্যবোধ ও নৈতিকতা সমাজে অনেক বেশি প্রয়োজন । নিম্নে এর কতিপয় কারণ তুলে ধরা হলো :
১. ব্যক্তিক পরিশুদ্ধি অর্জন (Gaining individual purity): মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। বিশ্বাস ও আচরণে মানুষ পরিশীলিত হবে এটাই সৃষ্টিকর্তার প্রত্যাশা । প্রতিটা মানুষও অন্যের নিকট থেকে এটাই প্রত্যাশা করে । মানুষের বিবেকবোধও তাকে সদা ভালো হয়ে চলার মন্ত্রণা দেয় । তাই একজন ব্যবসায়ী যখন লোভ-লালসা ভুলে মূল্যবোধ ও নৈতিকতা মেনে ব্যবসায় করে তখন তার মধ্যে আত্মিক পরিশুদ্ধি ও নির্মল মানসিক সন্তুষ্টি অর্জিত হয় ।
২. স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সুরক্ষা (Careful protection of health & safety): যে কোনো সমাজেই স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়টি ব্যবসায়িক নৈতিকতা ও মূল্যবোধ দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়। ফরমালিনযুক্ত মাছ ও ফলমুল, অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করে উৎপাদিত শাক-সবজি, খাদ্যে ক্ষতিকর কেমিক্যাল মিশ্রণ ইত্যাদি স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ভয়ংকর তা সবারই জানা । অবৈধ অস্ত্র বিক্রয় মানুষের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ । তাই ব্যবসায়ীদের মূল্যবোধ ও নৈতিকতা এত্থেকে মানুষকে সুরক্ষা দিতে পারে ।
৩. উত্তম পরিবেশ সুরক্ষা (Careful protection of environment): মানুষ পরিবেশের দাস । উত্তম পরিবেশ মানুষকে সমৃদ্ধ ও বিকশিত করে । অন্যদিকে প্রতিকূল পরিবেশ মানুষকে করে বিপর্যস্ত । এই পরিবেশ বিষয়টির ওপর ব্যবসায় নৈতিকতার গুরুত্ব অপরিসীম। সমগ্র বিশ্বে পরিবেশ দূষণে মুখ্য ভূমিকা রাখছে শিল্প কারখানাগুলো । তাদের নির্গত গ্যাস ও ধুয়া, নিঃসরিত বর্জ্য পরিবেশকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বুড়িগঙ্গার পানি, ঢাকার বাতাস সবকিছুই এর মারাত্মক শিকার । তাই নৈতিকতার শিক্ষাই ব্যবসায়ীদের পরিবেশ আইনের অনুসরণে ও উত্তম পরিবেশ সুরক্ষায় কার্যকর সহযোগিতা দিতে পারে ।
৪. মানসিক প্রশান্তি প্রতিষ্ঠা (Establishment of mental peace): একজন মানুষ কী করছে, কী খাচ্ছে, তাকে ঠকানো হলো কি না- এগুলো নিয়ে যদি সারাক্ষণ দুঃশ্চিন্তায় থাকে তখন ঐ মানুষটির মানসিক প্রশান্তি থাকে না । যখন বাজারে মরা মুরগীর গোশত, ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ ও ক্যামিক্যাল দিয়ে পাকানো ফল বিক্রয় হয়, ফরমালিনের ছড়াছড়ি থাকে, সৃষ্টিকর্মের নকল হয় অবলীলায়, নকল ও ভেজাল পণ্য কমদামে বিক্রয় হয় তখন ভোক্তা, ক্রেতা ও বিক্রেতা কেউই মানসিক প্রশান্তিতে থাকতে পারে না। ব্যবসায়িক মূল্যবোধ ও নৈতিকতাই শুধু সে অবস্থায় মানুষের মধ্যে প্রশান্তি সৃষ্টি করতে পারে ।
৫. সামাজিক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা (Establishment of social attachment): একজন ব্যবসায়ী যখন গ্রাহককে ঠকায় তখন স্বভাবতই ঐ ব্যবসায়ীর প্রতি গ্রাহকের বিরূপ ধারণা জন্মে । একটা সমাজের অনেক ব্যবসায়ী যখন এ অন্যায় কাজটি করে তখন সামগ্রিকভাবে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতিই মানুষের বিরূপ ধারণার সৃষ্টি হয়। ব্যবসায়ীরা যদি নৈতিকতা মেনে চলে, কাউকে না ঠকায়, মিথ্যা কথা না বলে, মাপে কম না দেয়, কথা ও কাজে মিল রেখে চলে তখন গ্রাহকরা নির্দ্বিধায় ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভর করতে পারে । এতে সমাজে একটা সম্প্রীতির পরিবেশ সৃষ্টি হয় ।
৬. জাতীয় ভাবমর্যাদা প্রতিষ্ঠা (Establishment of national image): জাতীয় ভাবমর্যাদা যে কোনো জাতির জন্য একটা বড় সম্পদ । ভালো ব্যবসায়ীরা দেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে । কিন্তু ব্যবসায়ী যদি খারাপ হয়, বিদেশী ব্যবসায়ীদের সাথে প্রতারণা করে তবে দেশের ভাবমূর্তি প্রচণ্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে । একবার বাংলাদেশের কিছু অসাধু চিংড়ি ব্যবসায়ী ওজন বাড়ানোর জন্য চিংড়ির মধ্যে লোহা ঢুকিয়ে বিদেশে বিক্রি করায় সম্ভাবনাময় চিংড়ি খাত যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা অপূরণীয় । ব্যবসায় নৈতিকতায় শুধুমাত্র এ ধরনের অবস্থা থেকে জাতিকে রক্ষা করতে পারে ।
৭. ব্যবসায়িক সমৃদ্ধি অর্জন (Gaining business prosperity): ব্যবসায়ে দীর্ঘস্থায়ী সমৃদ্ধি অর্জনেও মূল্যবোধ ও নৈতিকতার অনুসরণ আবশ্যক । অনেক সময়ই দেখা যায়, অবৈধ ব্যবসায়ী সীমিত সময়ের জন্য আর্থিকভাবে লাভবান হলেও দীর্ঘমেয়াদে তার পক্ষে ব্যবসায়ে ভালো করা সম্ভব হয় না। এ ধরনের ব্যবসায়ীরা শুধুমাত্র নিজেদেরই ক্ষতি করে না একটা খাতের এমনকি দেশের ব্যবসায় অগ্রগতিকেও বাধাগ্রস্ত করে । অথচ যদি দেশের ব্যবসায়ীরা সৎ হয়, নীতি-নৈতিকতার অনুসরণ করে তবে দীর্ঘমেয়াদে ব্যক্তিক ও সামগ্রিক ব্যবসায়িক অগ্রগতি অর্জন সম্ভব হয় ।
কীরণ বাজারের একজন ব্যবসায়ী । তার আচরণে গ্রাহক, সরবরাহকারী, প্রতিবেশি ব্যবসায়ী, বাজার কর্তৃপক্ষ কেউই সন্তুষ্ট নয় । তা হলে প্রতিযোগিতার বাজারে কীরণের ব্যবসায়টা কী ভালো চলবে? অসম্ভব। ধরো বাজারের দক্ষ ব্যবসায়ী দোলনের ওপর সবাই সন্তুষ্ট। সবাই তাকে সহযোগিতা করে। তবে নিঃসন্দেহে দোলনের ব্যবসায়টা ভালো চলবে । এই ভালো চলার পিছনে যারা সহযোগিতা করলো তাদের প্রতি যদি দোলন কৃতজ্ঞ হয়, তাদের প্রতি তার দায়িত্ব রয়েছে বলে মনে করে, সাধ্যানুযায়ী দায়িত্ব পালনে ব্রতী হয় তাহলে সমাজের এই পারে সদস্যরা কী আরও সন্তুষ্ট হবে না? আরও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করবে না? এই যে সমাজের প্রতি, বশ স্বার্থসংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহ (Stackholders) এর প্রতি দোলনের বা তার ব্যবসায়ের দায়িত্ব পালনের অনুভুতি একেই ব্যবসায়ে সামাজিক দায়বদ্ধতা হিসেবে দেখা হয় ।
দায় হলো কোনো কর্ম সম্পাদনের বা কর্তব্য পালনের দায়, আবশ্যকতা বা গরজ । তাই ব্যবসায়ের সামাজিক দায়বদ্ধতা হলো সমাজ ও সমাজ সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহের প্রতি ব্যবসায়ের কর্তব্য পালনের দায় যা সমাজ থেকে প্রাপ্ত নানান সুবিধা ও সহযোগিতার বিপক্ষে তার করা উচিত। ব্যবসায় সমাজবিজ্ঞানের একটা গুরুত্বপূর্ণ শাখা । সমাজের মানুষগুলোকে পণ্য ও সেবা সরবরাহ করে মুনাফা অর্জন করাই তার উদ্দেশ্য। এই উদ্দেশ্য পূরণে গ্রাহক বা ক্রেতার বাইরেও তার বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান; যেমন- শ্রমিক-কর্মী, ঋণদাতা, পণ্য বা কাঁচামাল সরবরাহকারী, প্রতিবেশি ব্যবসায়ী, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, সরকার ইত্যাদি পক্ষের সহযোগিতার প্রয়োজন পড়ে । এই সহযোগিতা পাওয়ার জন্য বা প্রাপ্তির প্রতিদান হিসেবে ব্যবসায় সাধ্যানুযায়ী নানান ভাবে বিভিন্ন ব্যক্তি, সমাজ বা রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব পালন করে। এর সবই ব্যবসায়ের সামাজিক দায়িত্ব পালন হিসেবে দেখা হয়ে থাকে । এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ব্যবসায়ী নিজেও সমাজের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। সে নিজের সন্তানদের জন্য যেমনি ভেজাল গুড়ো দুধ, মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ পছন্দ করে না অন্যের জন্যও তার এটাই চাওয়া উচিত । সচেতন মানুষ হিসেবে তার কর্তব্য হলো নীতি- নৈতিকতা মেনে ব্যবসায় চালানো । আর এটাও তার সামাজিক দায়বদ্ধতারই অংশ ।
ব্যবসায়কে বা একজন ব্যবসায়ীকে কেন সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ হতে হবে? এর সহজ উত্তর হলো সমাজের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতা ছাড়া ব্যবসায় পরিচালনা করা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। তাই সহযোগিতাকারীর প্রতি সাহায্যগ্রহীতা কৃতজ্ঞ হবে, বিনয়ী হবে- এটাতো স্বাভাবিক বিষয় । একজন ডাক্তার কেন সমাজের মানুষের প্রতি দায়িত্বশীল হবে? এর জওয়াব যদি এটা হয় যে, তার বাবা-মা তাকে পড়িয়েছেন তাই তাদের প্রতি দায়িত্বশীল হলেই চলবে- সেটা কখনই যথার্থ উত্তর হতে পারে না । তার এ ডাক্তার হওয়ার পিছনে রাষ্ট্র খরচ করেছে । সেই খরচের টাকা কাদের পকেট থেকে এসেছে? দেখা যাবে তার এই ডাক্তার হতে হাজারো মানুষের শ্রম, মেধা ও অর্থ ব্যয়িত হয়েছে। একজন ব্যবসায়ী রাস্তার মোড়ে, বিদ্যুত ও গ্যাস সুবিধা বিবেচনা করে, নিরাপত্তার কথা ভেবে ব্যবসায় গড়ে তুলেছে । এগুলোর ব্যবস্থা করেছে কে? তার শ্রম, মূলধন, মালামাল ইত্যাদি কারা সরবরাহ করছে? তার উৎপাদিত পণ্য ও সেবা কারা কিনছে- তাদের প্রতি কী তার কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত নয়? এমনতো নয় যে তার আর কোনো সহযোগিতা লাগবে না । তাই ভবিষ্যতে ভালো করার জন্যও একজন ব্যবসায়ীকে সামাজিক দায়বয়দ্ধতার বিষয়টি মাথায় রেখে ব্যবসায় চালাতে হয়। নিম্নে ব্যবসায়ের সামাজিক দায়বদ্ধতার গুরুত্ব সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো :
১. সামাজিক বিপর্যয় রোধ (Prevent to social disaster): দরিদ্র বাবা-মা কষ্ট করে সন্তান মানুষ করেছেন । এখন সেই সন্তান যদি বাবা-মার প্রতি দায়বদ্ধতার কথা না ভাবে তাহলে ঐ পরিবারটার কী দশা হবে? সরকার যদি জনগণের ওপর অধিক ট্যাক্স বসিয়ে, বিদেশ থেকে ঋণ এনে দেশের ব্যবসায় অবকাঠামো গঠন করে, ব্যবসায়ীদের সহজ শর্তে ঋণ দেয় আর যদি ব্যবসায়ীরা ব্যবসায় গড়ে সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দেয়, সরকারের সাথে অসহযোগিতা করে তবে সরকার চলবে কিভাবে? যে ক্রেতা ও ভোক্তা ব্যবসায়ীর সৌভাগ্যের ধন তাদেরকে যদি ঠকায়, প্রতারণা করে, ভেজাল ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন পণ্যে বাজার ছেয়ে ফেলে তাহলে ঐ ক্রেতা বা ভোক্তাদের দশা কী? সমাজের যে মানুষগুলো তাকে সহযোগিতা করে পরিবেশ দূষণের মাধ্যমে যদি সে ঐ সমাজেই বিপর্যয় সৃষ্টি করে তবে ব্যবসায়ীও কী এই বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাবে । তাই সমাজ বাঁচাতে ব্যবসায়ীদের অবশ্যই সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে কাজ করতে হবে ।
২. সহযোগিতার উন্নয়ন (Development of co-operation) : 'সহযোগিতায় মধুরতা আছে' এ আপ্তবাক্যটি সর্বত্রই প্রযোজ্য । একটা পরিবারে, সমাজে বা রাষ্ট্রে সবাই যদি একে অন্যের সহযোগী হয় তবে তার যে সৌন্দর্য, দৃষ্টিনন্দন ভাব ও ফলাফল তা নিঃসন্দেহে গুরুত্ববহ । সমাজ বিজ্ঞানের একটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসেবে ব্যবসায় সমাজ সম্পৃক্ত একটা প্রতিষ্ঠান । সবার সহযোগিতার মধ্য দিয়েই এটি বিকশিত হয় । ব্যবসায়ী, ভোক্তা, শ্রমিক- কর্মচারী, মধ্যস্থ ব্যবসায়ী, ঋণদাতা, সরবরাহকারী, কৌশলগত মিত্র, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, সরকার ইত্যাদি পক্ষসমূহের পারস্পরিক সহযোগিতাতেই একটা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বা দেশের ব্যবসায় খাত এগিয়ে যায়। পারস্পরিক কর্তব্যবোধ ও দায়বদ্ধতাই শুধুমাত্র এরূপ সহযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করে ব্যবসায়ের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে ।
৩. ব্যবসায়ের সুনাম প্রতিষ্ঠা (Establishment of goodwill of business) : সুনাম ব্যবসায়ের একটা মূল্যবান সম্পদ । এই সম্পদ দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না কিন্তু এর ফল অত্যন্ত বেশি ও সুদূরপ্রসারী । এই সুনাম অর্জনে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহের সবারই সুধারণা ও সহযোগিতার প্রয়োজন । একটা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান প্রচুর বিজ্ঞাপন দিয়ে বাজারে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে । গ্রাহকদের আগ্রহও বেড়েছে । কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করে না, শ্রমিক কর্মীদের বেতন ও সুযোগ সুবিধা বাড়ায় না, মধ্যস্থ ব্যবসায়ীদের পাওনা ও সুযোগ-সুবিধা দেয় না তাহলে দেখা যাবে ব্যবসায়টির ঋণ খেলাপি হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে, শ্রমিক-কর্মীরা আন্দোলন করায় উৎপাদন বন্ধ হতে পারে, পণ্যমান কমে যাওয়ায় বাজার হারাতে হতে পারে, মধ্যস্থ ব্যবসায়ীরা সহযোগিতা না করায় পণ্য বাজারে না যাওয়ার মতো অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে । তাই বিভিন্ন পক্ষের সুধারণা সৃষ্টির মধ্য দিয়েই একটা ব্যবসায়ের সুনাম প্রতিষ্ঠিত হয় । যার মূলে থাকে সকল পক্ষের প্রতি ব্যবসায়ের দায়বদ্ধতা ।
সমাজের বিভিন্ন পক্ষের প্রতি ব্যবসায় যে দায়িত্ব পালন করে তাকে ব্যবসায়ের সামাজিক দায়িত্ব পালন বলে । বর্তমান তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ ব্যবসায় জগতে ভালো করতে হলে ব্যবসায়ীদেরকে অবশ্যই সমাজের বিভিন্ন পক্ষের প্রতি দায়িত্ব পালনের প্রয়োজন পড়ে। ব্যবসায় 'পালন করে এমন সামাজিক দায়িত্বসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. ক্রেতা ও ভোক্তাদের প্রতি দায়িত্ব (Responsibility to customers and consumers) : ক্রেতা বা ভোক্তা বলতে গেলে ব্যবসায়ের প্রাণস্বরূপ । এই ক্রেতা বা ভোক্তারা সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ । তাদের আস্থা ও সহযোগিতার ওপর ব্যবসায়ের সফলতা বিশেষভাবে নির্ভরশীল। ব্যবসায় তাদের প্রতি নিম্নোক্তভাবে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করে :
২. শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রতি দায়িত্ব (Responsibility to employees) : শ্রমিক-কর্মচারীদের পরিশ্রমের ওপর বলতে গেলে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান টিকে থাকে । তাই তাদের সন্তুষ্ট ও কর্মচঞ্চল রাখার জন্য ব্যবসায় তাদের প্রতি নিম্নোক্তভাবে দায়িত্ব পালন করে :
৩. বিনিয়োগকারী ও সরবরাহকারীদের প্রতি দায়িত্ব (Responsibility to investors and suppliers) : বিনিয়োগকারীরা তাদের কষ্টের সঞ্চয়কে লভ্যাংশের বা মুনাফার প্রত্যাশায় ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করে । ঋণ ও মালামাল যারা সরবরাহ করে তারাও যথাসময়ে তাদের পাওনা প্রাপ্তির প্রত্যাশা করে । তাই তাদের প্রতি ব্যবসায় নিম্নোক্ত উপায়ে দায়িত্ব পালন করে :
৪. সরকারের প্রতি দায়িত্ব (Responsibility to Government) : সরকার যেকোনো সমাজের সর্বোচ্চ প্রতিনিধিত্বশীল সংস্থা। দেশের ব্যবসায় উন্নয়নে সরকারের যেমনি দায়িত্ব রয়েছে তেমনিভাবে ব্যবসায়েরও সরকারের প্রতি দায়িত্ব থাকা স্বাভাবিক । ব্যবসায় সরকারের প্রতি নিম্নোক্তভাবে দায়িত্ব পালন করে :
৫. সগোত্রীয় ব্যবসায়ীদের প্রতি দায়িত্ব (Responsibility to business community) : বর্তমানকালে সুষ্ঠুভাবে ব্যবসায় পরিচালনার ক্ষেত্রে সগোত্রীয় ব্যবসায়ীদের প্রতিও দায়িত্ব পালনের প্রয়োজন পড়ে । ব্যবসায়ীরা এরূপ দায়িত্ব পালন না করলে তাদের মধ্যে অন্যায় প্রতিযোগিতা ও রেষারেষি বৃদ্ধি পায় এবং এতে সকলেরই স্বার্থ বিপন্ন হয়ে থাকে । এ লক্ষ্যে ব্যবসায় যে সকল দায়িত্ব পালন করে তা নিম্নরূপ :
৬. সাধারণ সম্প্রদায়ের প্রতি দায়িত্ব (Responsibility to general communities) : সমাজ ও সমাজের মানুষকে ঘিরেই ব্যবসায় ও এর কার্যাবলি আবর্তিত হয়। এই সমাজ হতে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেই ব্যবসায় সমৃদ্ধি লাভ করে । তাই নিম্নোক্ত উপায়ে ব্যবসায় সমাজের প্রতিও তার দায়িত্ব পালন করে :
উপসংহারে বলা যায়, বর্তমানকালে ব্যবসায় শুধুমাত্র নিছক মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয় না বরং তা সমাজের বিভিন্ন পক্ষের প্রতি দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সম্পর্ক সৃষ্টি ও সবার নিকট হতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা লাভের প্রয়াস চালায়। যার ফলশ্রুতিতে ব্যবসায়ের সুনাম বৃদ্ধি পায় এবং এর সাথে ব্যবসায়ের সম্প্রসারণ ও অধিক মুনাফা অর্জন সম্ভব হয়ে থাকে ।
ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী । স্বাধীন বাংলাদেশে এটা আমাদের গর্বের ধন । কিন্তু এই ঢাকার পরিবেশে যেভাবে বিপর্যয় ঘটেছে তাতে এই শহরের মানুষ এখন বাধ্য হয়ে এখানে বাস করছে বললে অত্যুক্তি হবে না । ভয়াবহ যানজট, হাঁটার রাস্তা সব ব্যবসায়ী ও হকারদের দখলে । বুক ভরে বিশুদ্ধ বাতাস নেয়ার সুযোগ সীমিত । ধুলা-বালি, গ্যাস-ধুয়া আর পরিবহণের নির্গত শিশায় বাতাস দূষিত। পরিবহণের গাড়ির উচ্চ শব্দের হর্ণ, কোলাহল ও হৈ চৈ মিলিয়ে শব্দ দূষণ মারাত্মক । খেলার মাঠ নেই । যা আছে তা পরিবহণ কোম্পানির গাড়ি রাখার আর ময়লা ফেলার ভাগাড় । ঢাকার চারদিকে নদী । কিন্তু তা মারাত্মকভাবে পানি দূষণের শিকার । ট্যানারি ও শিল্পের তরল বর্জ্য ফেলার সহজ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে নদীগুলো । দুর্গন্ধে এখন এই নদীর পাশে বাস করাই কষ্টসাধ্য। এখন যদি বলা যায়, এই দূষণের পিছনে প্রত্যক্ষ দায় কাদের? দেখা যাবে উত্তর বেরিয়ে আসবে বেশির ভাগ দায় ব্যবসায়ী শ্রেণির । প্রশ্ন উঠতে পারে সরকার কী করছে? সরকারের ওপর দায় চাপিয়ে চোখ-কান বন্ধ করে ব্যবসায়ীরা এগুলো করবে এটাতো কাম্য নয় । সমাজের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে তাদের দায় রয়েছে এটা কী তারা অস্বীকার করতে পারবে?
বর্তমান বিশ্বে পরিবেশ দূষণের সবচেয়ে বড় দায় হলো ব্যবসায়ী সমাজের । আবহমান কাল থেকে কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে পরিবেশ দূষণের বিষয়টি মানুষের চিন্তায় আসেনি । কিন্তু যখন শিল্প-বাণিজ্য বেড়ে ওঠা শুরু হলো তখনই পরিবেশ দূষণের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হতে থাকলো । গ্রামের একটা ছোট বাজারকে নিয়েই যদি ভাবা যায় তবে দেখা যাবে হাটের দিন মানুষের কোলাহল, ধুলা-বালিসহ নানানভাবে সেখানের পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ছে । বাজারে উচ্চ আওয়াজে গানের সিডি বাজানো হচ্ছে, ঔষধ বিক্রেতাসহ নানান বিক্রেতারা মাইকে উচ্চস্বরে বক্তৃতা দিচ্ছে- এভাবে যদি শহর ধরা যায়, রাজধানী ধরা যায় তবে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, ব্যবসায়কে কেন্দ্র করে পরিবেশ কতটা দূষিত হচ্ছে । নিম্নে বিভিন্ন ধরনের দূষণে ব্যবসায়ের প্রভাব সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো :
১. শব্দ দূষণ ও এর প্রভাব (Sound pollution& its influence) : পারিপার্শ্বিকতায় শব্দ ও কোলাহল বেড়ে যাওয়ার কারণে শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশে যে অস্বাভাবিকতার জন্ম নেয় তাকে শব্দ দূষণ বলে । এই শব্দ দুষণে ব্যবসায়ীরাই মুখ্য ভূমিকা রাখে। ব্যবসায়ের উন্নয়ন এবং বাজার ও শহর সৃষ্টি শব্দ দূষণের অন্যতম কারণ । উড়োজাহাজ উঠছে ও নামছে এতে শব্দ দূষণ ঘটছে । রেলগাড়ি, বাস-ট্রাকসহ সব ধরনের পরিবহণ শব্দ দূষণের কারণ । মেশিনের শব্দ, বুলডোজার ও ড্রিলের শব্দ, নির্মাণ কাজ ইত্যাদি নানান ব্যবসায়িক কাজে শব্দ দূষণ ঘটছে । গ্রামের বাজারে উচ্চ আওয়াজে দোকানে সিডি বাজছে, মাইকিং হচ্ছে- এগুলোরও প্রধান কারণ ব্যবসায় । এরূপ শব্দ দূষণের ফলে মানুষের শ্রবণ শক্তি, চিন্তা ও অনুভূতি শক্তি হ্রাস পাচ্ছে । মানসিক চাপ বাড়ছে, সুস্থ চিন্তা-ভাবনায় বাধার সৃষ্টি হচ্ছে । উচ্চ রক্তচাপসহ কানে ও মাথায় নানা ধরনের রোগ সৃষ্টিতে এরূপ দূষণ অন্যতম কারণ ।
২. পানি দূষণ ও এর প্রভাব (Water pollution & its influence) : পানির স্বাভাবিকতায় প্রাণীজগত ও সৃষ্টিকূলের জন্য বিপর্যয় সৃষ্টিকরণের কাজকেই পানি দূষণ বলে । এই পানি দূষণের অন্যতম কারণ ব্যবসায় কর্মকাণ্ড । শিল্পবর্জ্য ও ব্যবসায়িক তরল ময়লা যখন নির্দ্বিধায় পানিতে ছেড়ে দেয়া হয় তখন ঐ পানি মানুষের জন্য আর উপকারী থাকে না । বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষা নদীর পানির রং ও দুর্গন্ধ থেকে এটা সহজেই অনুমান করা যায় । নদীতে ও সমুদ্রে জলযান চলছে। তৈল, ময়লাসহ নানান আবর্জনা ফেলা হচ্ছে পানিতে । তৈল ট্যাংকার ফেটে ও খনি থেকে তৈল নির্গত হচ্ছে পানিতে। এতে পানি তার স্বাভাবিকতা হারাচ্ছে। এভাবেই ব্যবসায় কর্মকাণ্ড পানি দূষণে বিরূপ ভূমিকা রাখছে। এরূপ পানি দূষণ চর্মরোগ সৃষ্টির মুখ্য কারণ । এছাড়া পানিবাহিত রোগ টাইফয়েড, ডায়রিয়া, জণ্ডিস ইত্যাদি পানি দূষণের ফলে সৃষ্টি হয় । মাছসহ জলজ প্রাণী নিধনে পানি দূষণ মুখ্য ভূমিকা রাখে ।
৩. বায়ু দূষণ ও এর প্রভাব (Air pollution & its influence) : স্বাভাবিক উপাদানের বাইরে বায়ুতে যখন নানান ধরনের ধুয়া, গ্যাস, ধুলা-বালি, সিসাসহ নানান খারাপ উপাদান যুক্ত হয় তখন তাকে বায়ু দূষণ বলে । ব্যবসায় আজ এই নির্মল বায়ু থেকেও মানুষকে বঞ্চিত করছে। ঢাকা শহরের কথাই যদি ধরা যায় তবে পরিবহনের গাড়িগুলো প্রতিদিন যে পরিমাণ ধুয়া ছড়াচ্ছে; তাতে ঢাকার বাতাস দূষিত হচ্ছে । ইটের ভাটা আমাদের দেশে বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ । শিল্প কারখানার ধুয়া, ধুলা-বালি, পরিবহণের পোড়া ডিজেল থেকে নির্গত সিসা ইত্যাদি বায়ু দূষণ করছে। এতে বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে। ওজনস্তর ক্ষয় হচ্ছে। নানান ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় সৃষ্টি হচ্ছে। ত্বক ক্যান্সার, ফুসফুসজনিত রোগ, যক্ষ্ণা, এ্যাজমা, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব এ কারণে বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
৪. মাটি দূষণ ও এর প্রভাব (Soil pollution & its influence): উর্বর মাটি যখন নানান খারাপ উপাদানযুক্ত হয়ে তার স্বাভাবিকতা হারায় তখন তাকে মাটি দূষণ বলে। এই মাটিও আজকে ব্যবসায় কর্মকাণ্ডের কারণে দূষণের অসহায় শিকার । কৃষি ফার্মগুলো অতিরিক্ত সার আর কীটনাশক ব্যবহার করে মাটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে । শিল্পবর্জ্য জমিতে ফেলে মাটির ক্ষতি করা হচ্ছে । ইটের ভাটার টুকরো ইট মাটির সাথে মিশে মাটির উর্বরতা শক্তি নষ্ট করছে । খনি থেকে সম্পদ আহরণের ফলে জমি যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনি এ সকল খনিজ পদার্থ মাটির সাথে মিশে মাটির উর্বরতা নষ্ট করছে। ভূগর্ভস্থ পানি অধিক মাত্রায় উঠিয়ে ফেলার কারণে মাটির শুষ্কতা বাড়ছে । মাটির নিচ দিয়ে যখন বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ নানান সংযোগ লাইন টানা হচ্ছে তাতেও মাটি তার স্বাভাবিকতা হারাচ্ছে । এই মাটি দূষণ কৃষি উৎপাদনকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে । মাটির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে । দূষিত মাটিতে চাষ করা শাক-শব্জী খেয়ে মানুষ পেটের পিড়া, কিডনি ও লিভারের নানা রোগে ভুগছে।
পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি এখন সারাবিশ্বেই ব্যাপক আলোচনার বিষয়। সুনামি, জলোচ্ছ্বাস, ঘুর্ণিঝড়, বন্যা, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টিসহ নানান প্রকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধির উচ্চহার সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে । গ্রীণ হাউজ প্রভাব আগামী ৫০ বছর পর পৃথিবীকে কোথায় নিয়ে দাঁড় করাবে এ নিয়ে সচেতন সবাই কমবেশি দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত । এই পরিবেশে বিপর্যয় সৃষ্টিতে ব্যবসায়ীরা যে সবচেয়ে বেশি দায়ী এ বিষয়টিও পরিষ্কার। তাই শিল্পোন্নত দেশগুলোর ওপর আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পরিবেশ সুরক্ষার চাপ বাড়ছে । আমাদের দেশের দিকে তাকালেও দেখা যাবে শিল্প ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো পরিবেশ দূষণে এগিয়ে । তাই স্বাভাবিকভাবেই ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠন ও বণিক সভাগুলো এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে তা সবাই প্রত্যাশা করে ।
বণিক সভা হলো বণিকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় দেখাশুনার জন্য তাদের গড়া স্বেচ্ছাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান । একটা এলাকার বা অঞ্চলের বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়ী একত্রিত হয়ে বণিক সভা গঠন করে । উক্ত আঞ্চলিক বণিক সভা মিলিত হয়ে আবার জাতীয় পর্যায়ে বণিক সভা গড়ে তোলে । বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়ীরাও তাদের ব্যবসায় খাতের উন্নয়নের জন্য সেক্টরভিত্তিক ব্যবসায় সংগঠন গড়ে তুলতে পারে । বাংলাদেশে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স-আঞ্চলিক বণিকসভার উদাহরণ। বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (FBCCI) জাতীয় পর্যায়ে গঠিত বণিক সভা। ঔষধ প্রস্তুতকারী শিল্প মালিক সমিতি, বাস মালিক সমিতি এভাবে নানান, ধরনের প্রতিষ্ঠান জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে ব্যবসায় সংগঠন গড়ে তুলে তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় দেখাশুনা, নিজেদের মধ্যে সম্প্রীতি রক্ষা এবং সরকারকে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শদানসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে । পরিবেশ সুরক্ষায় এ সকল সমিতি ও সংগঠনের নিঃসন্দেহে দায়িত্ব রয়েছে ।
বণিক সভা ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব করে । তাই ব্যবসায়ের সামাজিক দায়বোধের বিষয়টি তাদের দায়বোধেরও বিষয়। সরকার নীতি ও আইন প্রণয়ন করে । সেই নীতি ও আইন যাতে তাদের স্বার্থরক্ষা করে সেজন্য এ সকল প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন প্রয়াস--প্রচেষ্টা চালায়, দেন-দরবার করে । পরিবেশ সুরক্ষায় সরকার যে সকল আইন প্রণয়ন করে সেগুলো তাদের সদস্যরা যেন মেনে চলে তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এই বণিক সভা বা সংগঠনগুলোর অবশ্যই দায়িত্ব রয়েছে। একটা সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও আইনানুগ ব্যবসায় খাত গঠন ও পরিচালনায় এরূপ সংগঠনগুলোর দায়িত্ব হলো সরকার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সাহায্য করা । দু- চারটে প্রতিষ্ঠানের কারণে যেন সমগ্র ব্যবসায় খাতের বদনাম না হয় ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর তা দেখা সদা কর্তব্য। বাংলাদেশের পরিবেশ সংরক্ষণের যে সকল প্রধান প্রধান আইন ও নীতিমালা কার্যকর রয়েছে তা নিম্নরূপ :
উপরোক্ত আইন ও নীতিমালা বাস্তবায়নে সরকার বণিকসভা ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায় সংগঠনগুলোকে সাথে নিয়ে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা চালাচ্ছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সক্রিয় ভূমিকা পালনই এক্ষেত্রে যথেষ্ট নয় সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সহায়তা গ্রহণ প্রয়োজন। বিভিন্ন বণিক সমিতিগুলো পরিবেশ দূষণ রোধে নিম্নোক্ত উপায়ে সহযোগিতা করতে পারে :
১. আইনানুযায়ী যে সকল শিল্পে বর্জ্য শোধন যন্ত্রপাতি (ETP) বসানো প্রয়োজন তা সমিতির সকল সদস্য যাতে মান্য করে তা নিশ্চিত করা;
২. কোনো শিল্প ইউনিট এই নিয়ম ভঙ্গ করলে সমিতির সদস্যপদ বাতিলসহ সমিতির পক্ষ থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা;
৩. ট্যানারি শিল্প দ্রুত ঢাকার মধ্য থেকে চামড়া শিল্প পার্কে সরাতে সরকারকে সর্বোত সহযোগিতা প্রদান করা;
৪. বিক্ষিপ্তভাবে শিল্প প্রতিষ্ঠান না গড়তে সদস্যদের উদ্বুদ্ধ করা এবং বিভিন্ন শিল্পের জন্য পৃথক শিল্প এলাকা গড়তে সরকারকে উৎসাহিত করা;
৫. ইটের ভাটাগুলো যেন সরকারি নিয়ম মেনে চিমনি ব্যবহার ও ইটভাটা স্থাপন করে এবং কাঠ পুড়িয়ে বন উজাড় করতে না পারে সেজন্য সমিতির পক্ষ থেকে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করা;
৬. মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন যাতে রাস্তায় চলতে না পারে সেজন্য সংশ্লিষ্ট সমিতিগুলোর পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া এবং গণপরিবহন ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে সরকারকে সহায়তা করা;
৭. গাড়িতে উচ্চ মাত্রায় হর্ণ ব্যবহার না করতে সদস্যদের বাধ্য করা এবং অপ্রয়োজনীয় হর্ণ যাতে বাজানো না হয় সেজন্য ড্রাইভারদের প্রশিক্ষণ দেয়া;
৮. শিল্প বর্জ্য, হাসপাতাল বর্জ্য, তরল ময়লা ইত্যাদির অপসারণের বিষয়ে সরকারের সহযোগিতা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করা;
৯. যে সকল শিল্পে উচ্চ মাত্রার শব্দ সৃষ্টি হয় বা ধোয়া ও তরল বর্জ্য নির্গত হয় সে সকল শিল্পে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারপূর্বক তা রোধে ব্যবস্থা নিতে সদস্যদের উৎসাহিত করা;
১০.প্রতিটা সমিতির পক্ষ থেকে পরিবেশ সুরক্ষায় মনিটরিং সেল গঠন, পর্যবেক্ষণ, তত্ত্বাবধান এবং এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করা;
১১. পরিবেশ সুরক্ষায় ভূমিকা রাখছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমিতির পক্ষ থেকে উৎসাহিত ও প্রয়োজনে পুরস্কৃত করার ব্যবস্থা করা;
১২. সমিতির আয়ের একটা অংশ পরিবেশ সুরক্ষায় ব্যয়ের নির্দেশিকা জারি করা এবং বনায়ন, পরিবেশ সচেতনতা সৃষ্টিসহ বিভিন্ন কাজে তা ব্যয় করা ইত্যাদি ।
ঢাকা শহরের আশেপাশের নদীগুলোর পানি দূষণের মাত্রা কমানোর জন্য এরই মধ্যে পরিবেশ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যবসায় সংগঠনগুলোকে সাথে নিয়ে ১৮০০ এর মত শিল্প-কারখানাকে চিহ্নিত করেছে। তাদের জন্য বর্জ্য শোধন যন্ত্রপাতি (Effluent Treatment plant /ETP) বসানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নতুন শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রেও এ বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে । ট্যানারি শিল্প মালিক সংগঠনের সাথে আলোচনা করে সাভারে ট্যানারি শিল্প সরানোর ব্যবস্থা বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকদের সংগঠনের সাথে আলাপসাপেক্ষে এর বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে । ইটভাটাগুলোতে ১২০ ফুট উচ্চতার চিমনী লাগনোতে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো সহযোগিতা করায় তার বাস্তবায়ন সহজ হয়েছে । যানবাহনের ধুয়া ও গ্যাস নিঃসরণ বন্ধে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর সহায়তায় ২০০২ সাল থেকে দুই স্ট্রোক ইঞ্জিনবিশিষ্ট থ্রি হুইলার মোটরযান চলাচল ঢাকার শহরে বন্ধ করা হয়েছে । ক্ষতিকারক পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং তা মান্য করা হচ্ছে। এভাবে বণিক সভা ও ব্যবসায় সংগঠনগুলোর সহায়তা গ্রহণে সরকারকে যেমনি এগিয়ে আসতে হবে তেমনি এ সংগঠনগুলোকেও নিজেদের ব্যবসায় খাতের উন্নতি ও সুনাম বজায় রাখতে ও পরিবেশ সুরক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। পরিবেশে বিপর্যয় ঘটালে তার হাত থেকে যে কেউই বাঁচতে পারবে না-এ বিষয়টা ব্যবসায়ী ও ব্যবসায় সংগঠনগুলো যত তাড়াতাড়ি উপলব্ধি করতে পারবে ততই এক্ষেত্রে উন্নয়ন সহজতর হবে ।
সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে ব্যবসায়ী সমাজ গ্রাহকদের চাহিদা মতো পণ্য ও সেবা তাদের হাতের নাগালের মধ্যে পৌঁছে দিয়ে নিঃসন্দেহে অনেক বড় সামাজিক দায়িত্ব পালন করে চলেছে । তার বাইরেও ব্যবসায়ীরা ব্যাপক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেও সমাজকে সেবা দিচ্ছে। কিন্তু এই স্বাভাবিক কর্তব্য- কর্মের বাইরেও তাদের সমাজের জন্য অনেক কিছু করার রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন । এজন্যই বিভিন্ন বড় বড় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান মানুষের মরণঘাতি অসুখের চিকিৎসার গবেষণায় প্রচুর অর্থ ব্যয় করছে । হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গঠন, শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, হাসপাতালে বিভাগ চালু, চিকিৎসা সেবা প্রদান, পঙ্গু, প্রতিবন্ধী ও অবহেলিত মানুষকে সহায়তা দান, স্বাস্থ্য সচেতনতা সৃষ্টি, পরিবেশ সুরক্ষা ইত্যাদি কাজে প্রচুর অর্থ ব্যয় করছে । IBM এর কর্ণধার বিল গেটস, গেটস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নানান ভাবে শত শত কোটি ডলার সহযোগিতা করছেন। ভারতে টাটা, বিড়লা ইত্যাদি বড় বড় কোম্পানি হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে সেবা দিচ্ছে । বাংলাদেশের বড় প্রতিষ্ঠানগুলোও কর্পোরেট সামাজিক দায়িত্ব পালন (CSR) এর বিষয়ে এগিয়ে আসছে । নিম্নে তার কতিপয় উল্লেখ করা হলো:
কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে । শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি সরবরাহ, খেলাধুলা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, নারী উন্নয়ন, প্রতিবন্ধী শিশুদের উন্নয়ন, বিধবা নারীদের ভাতা প্রদান, মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদ পরিবারের জন্য কল্যাণ ভাতা প্রদানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ দেশের ব্যাংকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে । CSR এর আওতায় ২০০৯ সালে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো যখন ৫৫ কোটি টাকা খরচ করেছে তখন ২০১২ সালে এ কার্যক্রমে ব্যয়িত হয়েছে ৩০৪.৬৭ কোটি টাকা ।* এ সময়ে শুধুমাত্র শিক্ষাখাতে ব্যয় হয়েছে ৯৮.৩৮ কোটি টাকা ।
২০১২ সালে বাংলাদেশের কয়েকটি ব্যাংক CSR এর পিছনে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে তার চিত্র নিম্নে তুলে ধরা হলো:
ব্যাংকের নাম | CSR এর পিছনে ২০১২ সালে ব্যয়িত অর্থের পরিমাণ |
১. ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড | ৫২.৭৭ কোটি টাকা |
২. এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড | ৩৯.১০ কোটি টাকা |
৩. ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড | ৩০.১১ কোটি টাকা |
৪. প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড | ২৯.৫৭ কোটি টাকা |
৫. জনতা ব্যাংক লিমিটেড | ১৩.৭৬ কোটি টাকা |
৬. ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড | ১৩.০২ কোটি টাকা |
৭. অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড | ১০.৪১ কোটি টাকা |
৮. ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক লিমিটেড | ৯.৪৪ কোটি টাকা |
৯. মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড | ৮.৫ কোটি টাকা |
১০. শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড | ৭.৯২ কোটি টাকা |
বাংলাদেশে ব্যাংকসমূহের মধ্যে ডাচ বাংলা ব্যাংক CSR এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে । তারা ২০১১ সালে ৬,০৩৫ জন শিক্ষার্থীকে ১৬ কোটি টাকা প্রদান করেছে। ব্যাংকটি ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে একটা ক্যাথ ল্যাব (Cath Lab) এবং লিভার ও কিডনি সংযোজনের জন্য দু'টি অপারেশন থিয়েটারের পিছনে ৯.৩৬ কোটি টাকা ব্যয় করেছে । ২০০৩ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি ৩,০০০ এর বেশি ঠোঁট কাটা রোগীর প্লাস্টিক সার্জারির ব্যবস্থা করেছে । বিভিন্ন সময়ে ৩৫১ জন এসিড দগ্ধ নারীকে ১০ হাজার টাকা করে প্রদান করেছে। ৮০০ এর বেশি বিধবা মহিলাকে ১০ হাজার টাকা করে প্রদান করেছে। ২০০৭ সালের সিডর দুর্গত মানুষের জন্য ব্যাংকটি ৪.২২ কোটি টাকা প্রদান করে । এ ছাড়া ব্যাংকটি পরিবেশ সুরক্ষায় ও ভোটার আইডি কার্ড তৈরি সহ বিভিন্ন খাতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছে ।
বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি গ্রামীণ ফোন CSR এর আওতায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে মিলে সমাজের মানুষদের জন্য কাজ করে চলেছে। জন সচেতনতা সৃষ্টি, সরকারের টীকাদান কর্মসূচিতে সহায়তা দান, চক্ষু চিকিৎসা সেবা প্রদান, টেলি চর্ম চিকিৎসা সহায়তা প্রদান, নিরাপদ মাতৃত্ব ও শিশু যত্ন সেবা প্রদান, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ সেবা, অনলাইন স্কুল সেবা, শিক্ষা বৃত্তি, খেলাধুলায় সহায়তা দান, নন ফরমাল প্রাথমিক স্কুল কাম ঘুর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি সমাজ সেবামূলক কাজের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি CSR এর ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে। ২০০৭ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সাথে মিলে শিশুদের পোলিও খাওয়ানো ও টীকাদান কর্মসূচিতে কাজ করে যাচ্ছে। ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি দেশের বিভিন্ন স্থানে ২৪টি চক্ষু শিবির (Eye camp) করে ৩৬,৩২৭ জনকে ফ্রি চিকিৎসা এবং ৪,৭৪৩ জনকে ফ্রি সানি অপারেশনে সহযোগিতা করেছে। গ্রামের চর্মরোগীদের টেলি চিকিৎসার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠানটির আরেকটি জনসেবা কার্যক্রম । ২০১২ সালে ১,৫০০ এর বেশি রোগী এ পদ্ধতিতে বিজ্ঞ চিকিৎসকদের চিকিৎসা সেবা লাভ করেছেন। পাথফাইন্ডার ইন্টারন্যাশনাল এর সাথে সহযোগিতায় ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ‘সুর্যের হাসি’ প্রজেক্ট এর আওতায় ১৭,০৩,৭৬৭ জন মাকে নিরাপদ মাতৃত্ব সেবা সহযোগিতা প্রদান করেছে ।
বাংলাদেশের স্বনামধন্য উদ্যোক্তা মরহুম আকিজ উদ্দিন প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান আকিজ গ্রুপ বাংলাদেশের একটা অন্যতম শিল্প গ্রুপ হিসেবে পরিচিত। ২০১২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২০টির মত সমাজ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ‘আকিজ’ সহ বিভিন্ন নামে কর্মরত রয়েছে। বাংলাদেশে CSR এর ক্ষেত্রে তাদের কার্যক্রম অত্যন্ত সুবিদিত। তাদের প্রতিষ্ঠিত আদ-দ্বীন ফাউন্ডেশন চিকিৎসা সেবা প্রদানে অনন্য নজীর সৃষ্টি করেছে । এই ফাউন্ডেশনের অধীনে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলো নিম্নরূপ ;
আদ-দ্বীন ফাউন্ডেশনের বাইরেও প্রতিষ্ঠানটি আকিজ ফাউন্ডেশন স্কুল, আকিজ এতিমখানা, শেখ আকিজ উদ্দিন হাইস্কুল, ফিরোজা ফাউন্ডশেন নামে কতকগুলো শিক্ষামূলক ও সমাজধর্মী প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছে। উল্লেখ্য গ্রুপের অধীন শেখ আকিজ ফুটওয়্যার (SAF) লিমিটেড ঢাকায় টেলিফোন কলের মাধ্যমে খুবই কম খরচে এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস পরিচালনা করছে । এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি সাপ্তাহিক দু'টি দাতব্য শিশু সেবা কেন্দ্র পরিচালনা করে । ঢাকায় প্রতিবছর তারা বড় ধরনের চক্ষু ক্যাম্প পরিচালনা করে থাকে। যেখানে কমবেশি দু'হাজার রোগীকে তারা স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে। এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ৩৬টি চক্ষু ক্যাম্প পরিচালনা করেছে । যেখানে ৪৩,৬৫৯ জনকে চক্ষু স্বাস্থ্য সেবা প্রদান এবং ৩,৩১৬ জনকে ছানি (Cataract) অপারেশন করানো হয়েছে । এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ, পলিও ক্যাম্পে সরকারের সাথে কার্যক্রম পরিচালনা, বর্জ্য সংগ্রহ ও পরিশোধন এবং বৃক্ষ রোপনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি পালন করছে । একইভাবে আকিজ গ্রুপের অন্যান্য প্রতিটা প্রতিষ্ঠানেরও এরূপ নিজস্ব CSR কর্মসূচি রয়েছে ।
প্রয়াত স্যামসন এইচ চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত স্কয়ার গ্রুপ বাংলাদেশে একটি ঐতিহ্যবাহী শিল্প গ্রুপ হিসেবে পরিচিত । প্রতিষ্ঠানটি শুরু থেকেই কর্পোরেট সামাজিক দায়িত্ব পালন (CSR) এর বিষয়ে যত্নশীল । গ্রাহকদের উত্তম মানের পণ্য সরবরাহের পাশাপশি কর্মীদের কল্যাণের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটি অত্যন্ত আন্তরিক । শ্রমিকদের যে সকল অধিকার আইনে বলা হয়েছে তার অনুসরণে প্রতিষ্ঠানটি সচেষ্ট । সরকারকে রাজস্ব প্রদানে প্রতিষ্ঠানটি স্বচ্ছতার পরিচয় দিয়ে থাকে । যে কোনো ধরনের দুর্নীতির বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটি 0 (Zero) Tollerence এর নীতি অনুসরণ করে । প্রতিষ্ঠানটি ঢাকায় একটা বড় হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে সচেষ্ট রয়েছে । স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন NGO প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। এছাড়া দেশে খেলাধুলার সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে। পাবনায় প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানসহ অন্যদের পড়াশুনার জন্য ভালোমানের একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মুনাফাবিহীনভাবে পরিচালনা করছে। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য প্রতিষ্ঠানটি এর নারী শ্রমিক-কর্মীদের আবাসন সুবিধাসহ বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করে থাকে`। তথ্য প্রযুক্তির বিষয়ে প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা, চিকিৎসা ক্যাম্প পরিচালনা, পাবনার ঐতিহ্যবাহী আনন্দ গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরি পুনঃনির্মাণ ও উন্নয়ন ইত্যাদি জনহিতকর কাজে প্রতিষ্ঠানটির উজ্জ্বল ভূমিকা ভবিষ্যতেও বহাল থাকবে বলে আশা করা যায় ।
১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত গেটস ফাউন্ডেশন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও স্বচ্ছতার সাথে পরিচালিত প্রাইভেট ফাউন্ডেশন । মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি জগতের স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিল গেটস এবং তার স্ত্রী মেলিন্দা গেটস এর নামে ফাউন্ডেশনটি গঠিত। এই ফাউন্ডেশনের তিনজন ট্রাস্টি হলেন মি. ও মিসেস গেটস এবং প্রখ্যাত শেয়ার ব্যবসায়ী ওয়ারেন বাফেট (Warren Buffet) । ২০১২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের হিসাব মতে ফাউন্ডেশনের দানপ্রাপ্ত সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৩৬.২ কোটি বিলিয়ন ডলার । প্রতিবছর প্রতিষ্ঠানটি তার সম্পদের কমপক্ষে ৫% মানব কল্যাণে দান করে থাকে। ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠানটি ৪.৪ বিলিয়ন ডলার দান করেছে। যার বাংলাদেশী টাকায় মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৩৬,০০০ কোটি টাকা । প্রতিষ্ঠানটির দানের তিনটি প্রধান খাত হলো-
১. বৈশ্বিক স্বাস্থ্য কর্মসূচি (Global Health Program) : এই কর্মসূচির আওতায় প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাকে অর্থ সহযোগিতা প্রদান করে । এক্ষত্রে উল্লেখযোগ্য কতিপয় খাত নিম্নে তুলে ধরা হলো-
২. বৈশ্বিক উন্নয়ন কর্মসূচি (Global Development Program) : বৈশ্বিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ফাউন্ডেশন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে । এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
৩. যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কর্মসূচি (United States Program) : গেটস ফাউন্ডেশন আমেরিকান স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা বৃত্তি এবং এককালীন দান হিসেবে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে । এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের গবেষণা কর্মে, বিভিন্ন গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠানে নতুন আবিষ্কার ইত্যাদি কাজে প্রচুর আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে ।
উচিত-অনুচিত মেনে ব্যবসায় পরিচালনাকেই ব্যবসায় নৈতিকতা বলে । এর সাথে আইন ও নীতি দুটি বিষয়ই সম্পর্কযুক্ত। আইন মেনে যেমনি ব্যবসায় চালানো আবশ্যক তেমনি নীতি বা আদর্শ অর্থাৎ যা সমাজে করণীয় ও বর্জনীয় বলে প্রতিষ্ঠিত- এমন বিষয়াবলি মেনে ব্যবসায় পরিচালনা করাও অপরিহার্য । প্রতারণা করা, পণ্যে ভেজাল মিশানো, মাপে কম দেয়া, নকল পণ্য বাজারে উৎপাদন ও বিক্রয় করা ইত্যাদি দণ্ডনীয় অপরাধ এবং সেই হিসেবে অনৈতিক। অন্যদিকে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি না করা, অতি মুনাফার লোভ পরিত্যাগ করা, একচেটিয়া প্রবণতা পরিহার করা, শ্রমিক-কর্মীদের সাথে উত্তম ব্যবহার করা ইত্যাদি আদর্শ বা বিবেকবোধের বিষয় । যা ব্যবসায়ীদের মেনে চলা উচিত । এর বাইরেও বর্তমানকালে ব্যবসায়িক নৈতিকতা সংক্রান্ত কিছু বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে । বিষয়গুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো:
মি. মৃদুলের একটাই ছেলে । এখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে । শুরু থকেই মায়ের সাথে স্কুলে যায় । কত কিছু খাওয়ার বায়না । কেক, বার্গার, ফাস্টফুড, চকলেট, আইসক্রীম, কোমল পানীয় তার ভীষণ পছন্দের । বাবা অফিস থেকে ফিরতে মিষ্টি ও ফলমূল প্রায়সই নিয়ে আসেন । ছেলের ভাত-রুটি ও স্বাভাবিক খাদ্যের প্রতি আগ্রহ নেই বললেই চলে । ইদানিং দ্রুত মুটিয়ে যাচ্ছে। প্রথমে বাবা-মা বিষয়টি ততটা আমলে নেননি । এখন একটু থেকে একটু হলেই ঠাণ্ডা, জ্বর, পেটের পীড়া লেগেই থাকে । বড় ডাক্তারের কাছে নেয়া হলে ডাক্তার সাহেব সব জেনে-শুনে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর যা বললেন তার অর্থ দাঁড়ায়, ছেলেকে আদর করে ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রিত যে খাদ্য খাওয়াচ্ছেন তা তার শরীরের বিভিন্ন কোষের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে । হরমোনে নানান সমস্যা দেখা দিয়েছে। রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। তাই ছেলেকে বাঁচাতে এ সকল অপখাদ্য খাওয়ানো বন্ধ করুন । মি. ও মিসেস মৃদুল ভাবছেন, তাদের দোষেই ছেলের আজ এ অবস্থা ।
প্রাণী, গাছপালাসহ সকলের জীবন ধারণের জন্যই খাদ্যের প্রয়োজন । মানুষ তার বেঁচে থাকার প্রয়োজনেই খাদ্য গ্রহণ করে । এই খাদ্যের প্রতি মানুষের আগ্রহ স্বভাবজাত । তাই নানান ধরনের খাদ্য-দ্রব্য, ফলমূল, তরি- তরকারি এগুলো নিয়ে সারা বিশ্বে জমজমাট ব্যবসায়। খাদ্য ও খাদ্য জাতীয় সামগ্রী একটা পচনশীল বিষয় । ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণেও খাদ্য-দ্রব্য দ্রুত নষ্ট হয়। তাই ব্যাকটেরিয়া ও পচনশীলতা থেকে রক্ষায় এ ধরনের পণ্যে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ ছাড়াও খাদ্যের রং, ঘ্রাণ, স্বাদ, সৌন্দর্য, ঘনত্ব ইত্যাদি বাড়াতেও এরূপ রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার লক্ষণীয় । একটা সীমিত পর্যায় পর্যন্ত এ সকল পণ্যে রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোর বিষয়টি অনমোদিত হলেও এর সুবাদে সর্বত্রই ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারের প্রতিযোগিতা চলছে । উন্নত দেশগুলোতে এগুলো নিয়ন্ত্রণে শক্তিশালী ব্যবস্থা থাকলেও আমাদের মত দেশে তা নেই । সেখানকার ক্রেতারা শিক্ষিত ও সচেতন হওয়ায় এর ব্যবহার সীমিত পর্যায়ে থাকছে । কিন্তু আমাদের দেশে ক্ষতিকারক রাসায়নিকের ব্যবহার মারাত্মক। আইন থাকলেও তার প্রয়োগের অভাবে অসাধু ব্যবসায়ীরা ব্যাপকভাবে এর ব্যবহার করছে। ক্রেতাসাধারণ একদিকে অসচেতন ও অন্যদিকে অসহায়। কার্যত কোনো নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ছাড়াই খাদ্যদ্রব্য, মাছ, তরি-তরকারি, ফলমূলসহ সর্বত্রই ব্যাপকভাবে ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্য; যেমন- নাইট্রেটস (Nitrates), সালফাইডস (Sulfdes), ফর্মালিন (Formalin), সালফার ডাইঅক্সাইড (Sulphur Dioxide), অ্যালজিনেট (Alginate) ব্যবহার করা হচ্ছে। বিভিন্ন ফল পাকাতে ক্ষতিকারক কার্বাইড (Carbide) ব্যবহৃত হচ্ছে । খাদ্যকে আকর্ষণীয় রংযুক্ত করতে বিভিন্ন কালারিং এজেন্ট (Coloring agent) ব্যবহার করা হচ্ছে । এর ফলে বিভিন্ন বয়সের মানুষ মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির সামনে পড়ছে। কোষের ক্ষতি করায় কান্স্যারের ঝুঁকি বাড়ছে । পরিপাক তন্ত্রে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি করায় কিডনি, লিভারের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে মারাত্মক রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। শরীরে মেদ ও চর্বি সৃষ্টি হওয়ায় হার্টের সমস্যা ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। ব্লাডপ্রেসার, ডায়াবেটিস ইত্যাদি মরণঘাতি রোগ ব্যাপকভাবে বাড়ছে। শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কমে যাওয়ায় নানান ধরনের রোগ সংক্রমন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে মানুষকে রক্ষায় ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের কোনো বিকল্প নেই ।
আমি (লেখক) কৃষক পরিবারের সন্তান। ১৯৬৫ সালের দিকে ইরি জাতের ধানের আবাদ শুরু হলে ইউরিয়াসহ বিভিন্ন সারের ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ করেছি । ক্ষেতে ইউরিয়া ব্যবহারের দিন দশকের মধ্যেই ধানের গাছ কিভাবে দ্রুত উন্নতি লাভ করে তা দেখে কৃষকরা অভিভূত । তাই এ সার ব্যবহারে এক ধরনের প্রতিযোগিতা দেখছি কৃষকদের মধ্যে। ধানে ও অন্য ফসলে কীটনাশক ঔষধ ব্যবহার না করলে রোগ-বালাই বাড়ে । তাই নামমাত্র মূল্যে বিক্রয় হওয়া কীটনাশক ঔষধ ছিটানো হয়েছে মাত্রাতিরিক্তভাবে । ক্ষতি কী হয়েছে তখন তা এতটা নজরে আসেনি । তবে খাল-বিলসহ, নদ-নদীর মাছ, ব্যাঙসহ জলজ প্রাণী, ভালো-পোকা-মাকড় এমন কী পাখীও মরেছে ব্যাপক হারে। ক্ষতিকর DDT পাউডার ময়দা নাড়ার মত ছাইয়ের সাথে মিশিয়ে বেগুনের জমিতে ছিটিয়েছি- সে দৃশ্যও মনে পড়ে । এর কুফল নতুন নতুন রোগ বালাইয়ের মধ্য দিয়ে মানুষ এখন প্রত্যক্ষ করছে। এখন মারাত্মক ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার করে হাইব্রিড জাতীয় বিভিন্ন ফসলের আবাদ করা হচ্ছে । দ্রুত ফলন বৃদ্ধির জন্য গাছে থাকা কলা, আমসহ সর্বত্র স্প্রে করা হচ্ছে, স্বাভাবিক বৃদ্ধি থামাতেও ক্ষতিকর রাসায়নিক স্প্রে করা হচ্ছে। এগুলো যে মানুষের জীবনের জন্য কত বড় ক্ষতিকর তা উৎপাদনকারীরা কে কতটা বুঝছে কে জানে?
খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে রাসায়নিক ব্যবহার আধুনিক চাষাবাদের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ । জমির পরিমাণ বাড়ছে না অথচ অনেক বেশি ফসল চায়। সেজন্য ফসলের নতুন নতুন জাত আবিষ্কারে গবেষক প্রতিষ্ঠানগুলো যেমনি চেষ্টা চালাচ্ছে তেমনি অতিরিক্ত ফসল উৎপাদনে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও হরমোন জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করা হচ্ছে । এতে ফসলের উৎপাদন বাড়ছে ঠিকই কিন্তু অতিরিক্ত মাত্রায় ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে একদিকে যেমনি মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে তার ক্ষতিকর প্রভাব উৎপাদিত ফসলের মধ্যেও এসে যাচ্ছে । যা মানুষের শরীরের মধ্যে প্রবেশ করে স্বাস্থ্য ঝুঁকির জন্ম দিচ্ছে । তরি-তরকারি ও ফলমূলে এ জাতীয় ক্ষতিকর রাসায়নিকের প্রভাব পড়ছে অনেক বেশি। শাক-সব্জীতে এ ধরনের রাসায়নিক স্প্রে করার পর একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা না করে এগুলো সংগ্রহ করে খাওয়ার কারণে তা শরীরে যেয়ে পৌঁছাচ্ছে। এতে পরিপাক তন্ত্রে বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দিচ্ছে। ফসলে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য ফলমূলে স্প্রে করায় তা খেয়ে মানুষের হরমোনেও নানান ধরনের অসঙ্গতির সৃষ্টি করছে। সবমিলিয়ে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন ধরনের দরকারি পোকা-মাকড় ও জলজ প্রাণির সাথে মানুষের জীবনেও মারাত্মক হুমকির সৃষ্টি হচ্ছে। বাড়ছে কিডনি ফেইলিওর (Failure), লিভার সিরোসিস, ব্লাড প্রেসারসহ বড়-ছোট নানান ধরনের রোগ। অসচেতনভাবে এ ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার করতে যেয়ে কৃষকের শ্বাস-প্রশ্বাসে তা শরীরের ভিতরে যেয়েও ঘাতক ব্যাধির সৃষ্টি হচ্ছে । ত্বকেও দেখা দিচ্ছে নানান সমস্যা । তাই স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে এ ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার প্রয়োজনীয় মাত্রায় কমিয়ে আনা ও ব্যবহারে সতর্ক হওয়া অত্যন্ত জরুরি ।
বাংলাদেশ ব্যাপক জনসংখ্যা অধ্যষিত একটা দেশ। ঢাকা শহরেই এক কোটির ওপর লোকের বাস। শহরাঞ্চলগুলোতে ব্যাপক পরিবেশ দূষণের কারণে মানুষ সবসময় স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করে। পরিবেশ দূষণের আর সব কারণের মধ্যে পলিথিন একটা অন্যতম কারণ হিসেবে বাংলাদেশে চিহ্নিত। পলিথিন এমন একটা পণ্য যা মাটির মধ্যে মেশে না ও পানিতে গলে না । ফলে মাটি দূষণের ও পানি দূষণের তা অন্যতম কারণ । এর ব্যাপক ব্যবহার এবং যত্রতত্র তা ফেলার ফলে রাস্তা-ঘাট, বাসা-বাড়ি সর্বত্র তা আবর্জনা সৃষ্টির একটি কারণ হিসেবে বিবেচিত। স্যুয়ারেজ লাইন আটকে যাওয়া, জলাবদ্ধতা ইত্যাদির অন্যতম কারণ এ ধরনের পলিথিন । অন্যান্য ময়লা ও বর্জ্য যেভাবে সংগ্রহ, বহন ও নিঃশেষ করা যায় এটা তা করা যায় না । বরঞ্চ ব্যবহৃত পলিথিন সংগ্রহ করে পুনরায় উৎপাদন কাজে লাগাতে যেয়ে এটা আরেক ধরনের বায়ু দূষণের সৃষ্টি করে । তাই সবকিছু বিবেচনায় সরকার ১০০ মাইক্রোনের নিচে উৎপাদিত সকল ধরনের পলিথিন উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার ১ জানুয়ারি ২০০২ থেকে ঢাকা মহানগরীতে এবং ১ মার্চ ২০০২ থেকে সারাদেশে নিষিদ্ধ করেছে । এর বিকল্প বিভিন্ন রকমের চট, কাপড়, কাগজের ব্যাগ, ঠোঙ্গা ইত্যাদি ব্যবহারে সরকার জনগণকে উৎসাহিত করছে । যদিও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বা যোগসাজসে পলিথিন উৎপাদন ও বাজারজাত করছে তথাপিও এর ব্যাপক ব্যবহারের ফলে যে দৃশ্যমান বিপদের সৃষ্টি হয়েছিল তা কমে এসেছে ।
খাদ্য ছাড়া জীবন বাঁচে না । সেই খাদ্যই যদি মানুষের জীবন সংহারক হয় তবে তার চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে? বিষ খেলে মানুষ মারা যায়- এটা ঠিক কিন্তু যে বিষ খেয়ে মানুষ একবারে মরে না, খাদ্যের সাথে ধীরে ধীরে মানুষের শরীরে ঢুকে নিরবে ঘাতক রোগের সৃষ্টি করে, মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় - সেই খাদ্য, সেই খাদ্যের উৎপাদন ও খাদ্যে রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার দ্রুত বন্ধ হওয়া আবশ্যক। এক্ষেত্রে। সমস্যা হলো রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার একবারে বন্ধ করার বিষয়ে কেউই হয়তোবা রাজি হতে চাইবে না । কারণ খাদ্য উৎপাদনে প্রয়োজনীয় মাত্রায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার অত্যাবশ্যক। খাদ্য সংরক্ষণেও সীমিত মাত্রায় এর ব্যবহার বিশেষজ্ঞগণ অনুমোদন করেন। কিন্তু অধিক মাত্রায়, বেপরোয়াভাবে এর ব্যব হার অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত । উল্লেখ্য উন্নত দেশসমূহে কোনোরূপ রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার ছাড়াই 'অর্গানিক ফুড’ উৎপাদনের দিকে তারা নজর দিচ্ছে ও কৃষকদের উৎসাহিত করছে। সে সব দেশে 'অর্গানিক ফু' ড' প্রকৃতই অর্গানিক ফুড কি না তা পর্যবেক্ষণ, পরীবিক্ষণ সনদ দেয়ার জন্য আলাদা কর্তৃপক্ষ রয়েছে । রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার সে সকল সমাজের কৃষকদের মধ্যে সচেতনতার সৃষ্টি হচ্ছে । ফলে তারা বিষয়গুলোকে তাদের ম তো করে সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে । আমাদের দেশে এই অশুভ রাসায়নিকের কুফল থেকে বাঁচতে নিম্নোক্ত পন্থ সমূহের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি :
১. সরকারের করণীয় (Duty of Govt.) : যে কোনো সমাজেই সরকার হলো সবচেয়ে বড় দায়িত্বশীল সংস্থা । আইন ও নীতিমালা প্রণয় ন এবং তার বাস্তবায়নের গুরুদায়িত্ব সরকারের ওপর বর্তে। রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারের মাত্রা নির্ধারণ ও তা বাস্তবায়নে সরকারকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যের উৎপাদন ও আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যে কেউ যেন অবাধে এ সকল জিনিস সংগ্রহ করে খাদ্য উৎপাদন ও সংরক্ষণে ব্যবহার করতে না পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। ফরমালিনের ব্যবহার বন্ধে সরকার যেভাবে ভ্রাম্যমান আদালতসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়ে।ছে সর্বক্ষেত্রে তার যথাযথ প্রয়োগে সরকারকেই সর্বোচ্চ আন্তরিকতাসহ এগিয়ে আসা উচিত ।
২. খাদ্য উৎপাদনকারী ও বিক্রেতাদের করণীয় (Duty of food producers and sellers): যারা রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহারের করে খাদ্য উৎপাদন করছেন তাদের সচেতনতা ও আন্তরিকতা এক্ষেত্রে ভালো ফল দিতে পারে । অনেক কৃষক বা খামারি রয়েছেন যারা এগুলোর ক্ষতিকর ব্যবহার সম্পর্কে ততটা ওয়াকিবহাল নয় । জৈব সার, জৈব কীটনাশক ও নতু ন নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করে খরচ কমানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি না করেও ফসল উৎপাদন করা যায়- এ বিষয়ে তাদের সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন । উৎপাদক ও বিক্রেতাদের অধিকাংশই নিজেদের সামান্য লাভের জন্য কী করছে ও কী বিক্রি করছে তা বুঝতে চান না । তাই তাদেরকে যদি এ সকল জিনিস ব্যবহার ও বিক্রয়ের বিষয়ে সচেতন ও সতর্ক করা যায় তবে ক্ষতিকর এ সকল দ্রব্যের ব্যবহার কমে আসতে পারে ।
৩. গ্রাহক বা ভোক্তাদের করণীয় (Duty of customer or consumers): ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহৃত উৎপাদিত খাদ্য যারা খাচ্ছেন বা ব্যবহার করছেন তারাই প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রেণি। যদিও এরূপ খাদ্য উৎপাদক ও বিক্রেতারা ও কার্যত এক পর্যায়ে এরই অন্তর্ভুক্ত । এই শ্রেণি কী কিনছেন, ক্ষতিকর রাসায়নিকের প্রভাব পণ্যে বা খাদ্যে আছে কি না- এগলো যাচাই-বাছাই করার চেষ্টা করেন, একটু বেশি পয়সা দিয়ে হলেও অর্গানিক বা কার্যকর শানের পণ্য ক্রয় করেন তবে এরূপ ক্ষতিকর দ্রব্যের উৎপাদন ও বিক্রয় নিরুৎসাহিত হতে পারে । এছাড়া বেগুন, বরবটি, সীম ইত্যাদি তরকারি কম কিনে চাল কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, কাঁচাকলা, কচুর চলতি ইত্যাদি তরকারি বেশি খাওয়ার অভ্যাস করা যেতে পারে । ফলের ক্ষেত্রেও আগেল, কলা, আঙ্গুর ইত্যাদি কমিয়ে কাঠাল, ডালিম, আমড়া, কামরাঙ্গা ইত্যাদি খেলে হয়তো ক্ষতিকর রাসায়নিকের প্রভাব কমতে পারে ।
৪. গণমাধ্যমের কর্তব্য (Dutyt of mass media) : মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি এবং অন্যায় কর্মকাণ্ডকে নিরুৎসাহিত করতে যে কোনো সমাজেই গণমাধ্যম; যেমন- রেডিও, টেলিভিশন, ইত্যাদির দায়িত্ব অনেক বেশি। প্রতিটা চ্যানেল যদি খাদ্য উৎপাদনে ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহারের কুফল মিডিয়াতে তুলে ধরে, উৎপাদকদের করণীয় এবং এগুলোর ব্যবহার ভিন্ন যারা পণ্য উৎপাদন করছে তাদের কৌশলগুলো মানুষের সামনে উপস্থাপন করে তবে উৎপাদকরা এ বিষয়ে সচেতন ও সতর্ক হবে। যদি এ প্রচেষ্টার মাধ্যমে গ্রাহক বা ভোক্তা পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টি; করা যায়, এর কুফল বা ক্ষতিগ্রস্তদের অবস্থা তুলে বিশেষজ্ঞদের মতামত প্রকাশ করা হয়। সরকারি উদ্যোগ 'ও আইনগত বিষয়াবলি জানানো যায় তবে প্রচারের এ যুগে তা ভালো ফল দিতে পারে ।